‘ডি’ গ্রুপ থেকে ইতোমধ্যেই ছিটকে গেছে শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে সুপার এইটে কোয়ালিফাই করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তলানিতে থাকা নেপাল কাগজে-কলমে টিকে থাকলেও শক্তিমত্তা বিবেচনায় তাদের সম্ভাবনা অনেকটাই কম। তাই সুপার এইটের লড়াইয়ে বাংলাদেশের পথে কাঁটা হয়ে ছিল নেদারল্যান্ডস। এবার মুখোমুখি লড়াইয়ে ডাচদের ২৫ রানে হারিয়ে সমীকরণ সহজ করল টাইগাররা। ৩ ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখলো বাংলাদেশ।
আজ কিংসটনে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৪ রান করেন সাকিব। তাছাড়া ৩৫ রান এসেছে তানজিদ তামিমের ব্যাট থেকে। জবাবে খেলতে নেমে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি নেদারল্যান্ডস।
১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি নেদারল্যান্ডসের। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে সাজঘরে ফেরেন মাইকেল লেভিট। এই ওপেনারকে ১৮ রানে ফিরিয়ে নতুন বলে দারুণ শুরু করেন তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে তাসকিনের খাটো লেন্থের বলে পুল করতে গিয়ে ভুল করেন লেভিট। হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে।
পরের ওভারেই উইকেটের দেখা পান তানজিম হাসান সাকিবও। ধীরগতির শুরু করা ম্যাক্স ও’ডাউডকে ফেরান এই তরুণ পেসার। তানজিম সাকিবকে ফিরতি ক্যাচ দেওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ বলে ১২ রান।
২২ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ডাচদের টেনে তোলেন বিক্রমজিত সিং। এই টপ অর্ডার ব্যাটার উইকেটে এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। তবে তাকে ইনিংস বড় করতে দেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দশম ওভারের তৃতীয় বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়েছেন তিনি। তার আগে বিক্রমের ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ বলে ২৬ রান।
এরপর সাইব্রান্ড অ্যাঙ্গেলব্রাখটকে সঙ্গে নিয়ে ডাচদের ম্যাচে ফেরান স্কট এডওয়ার্ডস। ২২ বলে ৩৩ রান করে অ্যাঙ্গেলব্রাখট ফিরলে ভাঙে সেই জুটি। ইনিংসের ১৫তম ওভারের চতুর্থ বলে রিশাদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দেন তিনি। এক বল পর বাস ডি লিডিকেও ফেরান রিশাদ। তাতে ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে নেয় বাংলাদেশ।
এরপর ডাচদের আশার আলো হয়ে উইকেটে ছিলেন শুধুই এডওয়ার্ডস। ১৭তম ওভারের প্রথম বলেই অধিনায়ককে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ডাচরা। মুস্তাফিজ-রিশাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৩৪ রানের বেশি তুলতে পারেনি তারা।
বাংলাদেশের হয়ে ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার রিশাদ। তাছাড়া তাসকিন ২ টি এবং মুস্তাফিজ, তানজিম সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ একটি করে উইকেট শিকার করেছেন।
এর আগে বাংলাদেশের হয়ে তানজিদ তামিমের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করেন অফফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ অধিনায়ক আরও একবার ব্যর্থ হয়েছেন। চার নম্বর, তিন নম্বর পজিশন কিংবা ওপেনিং সব জায়গায়ই তাকে দিয়ে চেষ্টা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে কিছুতেই যেন ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারছেন না শান্ত।
আজ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। আরিয়ান দত্তের করা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে রিভার্স সুইপ করে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন শান্ত। একজন ওপেনারের এমন শট সিলেকশন বেশ দৃষ্টিকটু। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩ বলে ১ রান।
শান্তর মতোই বাজে সময় পার করছেন লিটন দাস। আজকের ম্যাচেও যেন শান্তকেই অনুসরণ করলেন তিনি। তিনে নেমে করেছেন ২ বলে ১ রান। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে আরিয়ানকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার শুরুতেই ফিরলেও আজ দলের হাল ধরেন তানজিদ তামিম। এই তরুণ ওপেনারের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব আল হাসান। তিনি এদিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলেছেন। তাদের দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৫৪ রান তুলে বাংলাদেশ।
পাওয়ার প্লে শেষে আর সুবিধা পারেননি তানজিদ তামিম। ভালো শুরুর পর এই তরুণ ওপেনার থেমেছেন ৩৫ রানে। ইনিংসের নবম ওভারে বোলিংয়ে ছিলেন ফন ম্যাকারেন। তৃতীয় বলটি খাটো লেন্থে ছিল, সেখানে পুল করতে গিয়ে ব্যাকওয়াড স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন তানজিদ তামিম।
পাঁচে নেমে এদিন সুবিধা করতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়। ইনফর্ম এই ব্যাটার গত দুই ম্যাচে ছিলেন দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার। তবে আজ ব্যর্থ হলেন। উইকেটে এসে শুরু থেকেই বেশ ভুগছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে মুক্তি দিয়েছেন টিম প্রিঞ্জল।
এই বাঁহাতি স্পিনারকে ব্যকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন হৃদয়। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ বলে ৯ রান। হৃদয়ের পর মাহমুদউল্লাহও উইকেটে এসে রান পেতে বেশ ভুগেছেন। শেষ পর্যন্ত ২ চার ও ২ ছয়ে ২১ বলে ২৫ রান করেছেন তিনি।
এদিন ব্যাতিক্রম ছিলেন সাকিব। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সর্বশেষ আসর থেকেই ব্যাটিংয়ে অধারাবাহিক তিনি। চলমান বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচেও রান পাননি। আর তাতে সমালোচনাও শুনতে হয়েছে তাকে। অবশেষে রানে ফিরেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। আজ পেয়েছেন ফিফটির দেখাও। ডাচদের বিপক্ষে ৩৮ বলে ফিফটি করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৪৬ বলে অপরাজিত ৬৪ রান করছেন সাকিব। আর জাকের অপরাজিত ছিলেন ৭ বলে ১৪ রান করে।
এসএস/এমএফ