হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান ইরানি প্রেসিডেন্ট


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  ২০ মে, ২০২৪ ১:৩৮ : অপরাহ্ণ

ইরানে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান এবং আরও কয়েকজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি। প্রেস টিভির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ- এর সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলোতে ড্রোন থেকে নেওয়া দুর্ঘটনাস্থলের ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। দেশটির আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজ বলছে, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দেশটির জনগণের জন্য তাঁর দায়িত্ব পালনের সময় একটি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

রেড ক্রিসেন্টের ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ের ওপর হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ লেজ দেখা যাচ্ছে। উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে প্রাণের কোনো চিহ্ন নেই। তবে এখন পর্যন্ত তাদের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেনি ইরান সরকার। ইরানের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, রাইসিকে বহনকারী বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে।

হেলিকপ্টারটিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান এবং পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমতি এবং এ প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনির মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম ছিলেন বলে জানা গেছে।

ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এর সন্ধান পেতে বেগ পেতে হয়েছিল উদ্ধারকর্মীদের। কুয়াশাপূর্ণ বৈরী আবহাওয়া ও ঘটনাস্থল দুর্গম এলাকা হওয়ায় উদ্ধার অভিযানে দেরি হচ্ছিল। পরে হেলিকপ্টারটির বিধ্বস্ত হওয়ার অবস্থান শনাক্ত করে উদ্ধারকারী দল। সেখানে বড় ধরনের অনুসন্ধান অভিযান শুরু করে।

দেশটির বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়, ৪০ জনের বেশি উদ্ধারকারীর দল এ অভিযানে নামে। অনুসন্ধানী কুকুর এবং ড্রোন দিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে তাদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হয়।

রেড ক্রিসেন্টের এক মুখপাত্র জানান, আবহাওয়া খারাপ থাকায় দ্রুত উদ্ধার অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। রোববার রাতে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আজ সোমবার সকালে হেলিকপ্টারটির খোঁজ মেলে। ইরানের রেডক্রিসেন্ট প্রধান পীরহোসেন কোলিভান্দ জানান, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি খুঁজে পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি ভালো নয়।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার খবরে বলা হয়, ৬৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রাইসি আজারবাইজান সীমান্তের কাছে ইরানের একটি জলাধার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছিলেন। পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের ভার্জাকন এলাকায় জরুরি অবতরণ করার সময় তাঁর হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে ভার্জাকন এবং জোলফা শহরের মধ্যে ডিজমার জঙ্গলে। হেলিকপ্টারে আরও ছিলেন পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমতি এবং সেখানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলি আলে-হাশেম। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রাইসি ইরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন।

ইরানের বিমান দুর্ঘটনার ভয়ংকর রেকর্ড রয়েছে। এর অন্যতম কারণ, দেশটি বিমানের পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে পারে না। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই সময় থেকে বিমান দুর্ঘটনায় প্রায় ২০০০ ইরানি প্রাণ হারিয়েছেন।

এমন সময় এ দুর্ঘটনা ঘটল, যখন গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধংদেহী অবস্থা বিরাজ করছে। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান।

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ