রাইসিকে কেন যমের মত ভয় পেতেন ইসরায়েল ও পশ্চিমারা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  ২০ মে, ২০২৪ ১:৫৩ : অপরাহ্ণ

ইসরায়েল ও পশ্চিমারা এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতেই পারে। মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সবচেয়ে ‘বড় শত্রু’ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। যদিও কঠোর অনুশাসন মেনে চলা দেশ ইরানের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের এই স্বস্তি কতদিন স্থায়ী হয়, সেটা সময়ই বলে দেবে। ইব্রাহিম রাইসিকে পরবর্তী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে মনে করা হচ্ছিল। নির্বাচনে রাইসির প্রতি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সদয় দৃষ্টি সেই জল্পনা আরও উসকে দিয়েছিল।

২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইরানের নীতি আইন আরও কঠোর করেন রাইসি। এর ফলে দেশটিতে সরকারবিরোধী অভিযানে খড়গহস্ত হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি জোরালো আলোচনা চালিয়েছেন রাইসি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির তত্ত্বাবধানে দীর্ঘদিন ধরে বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। এ ছাড়া সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধ শেষে বহু রাজনৈতিক বন্দির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন রাইসি।

রাইসি শত শত রাজনৈতিক কারাবন্দিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় ‘বুচার অব তেহরান’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন তিনি। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনাও কুড়িয়েছিলেন রাইসি। ২০০৬ সাল থেকে অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এই অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্ট সর্বোচ্চ নেতা নিয়োগ এবং পরামর্শ দেওয়া কাজ করে থাকে।

দীর্ঘদিনের বোঝাপড়ার কারণে রাইসিকে খামেনির উত্তরসূরি মনে করা হতো। আর এটাই ইসরায়েলের নেতাদের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ৮৫ বছর বয়সী খামেনি প্রায় অসুস্থ থাকছেন, তাই রাইসির মতো একজন কট্টর নেতা ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হলে, ইসরায়েলকে এক দণ্ডও শান্তিতে থাকতে দিতেন না। এর নমুনাও কয়েক সপ্তাহ আগে দেখেছে ইসরায়েল। তাই ইসরায়েলের নেতারা খামেনির চেয়ে রাইসিকে বেশি ভয় পেতেন।

ইসরায়েলি রাজনীতিক থেকে ধরে সামরিক কর্মকর্তারা যে রাইসিকে ভয় পেতেন, তা দেশটির সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তার কথাও উঠে এসেছে। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল তামির হাইমান বলেছেন, রাইসির চেয়েও ভয়ংকর কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। যদিও রাইসির অবর্তমানে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি ও পরমাণু কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না বলেও মন্তব্য করেন হাইমান।

রাইসির মৃত্যু ইরান তথা মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক রাজনীতির ধারা বদলে দিতে পারে। কট্টর ও অনমনীয় হিসেবে শত্রুদের মনে যে ভয় রাইসি তৈরি করেছেন, তা অন্য কোনো নেতা সহসা করতে পারবেন কিনা, সেটা সন্দেহাতীত নয়। আর খামেনির জন্যও এটা বড় ধাক্কা, কারণ রাইসি তার নীতির কঠোর বাস্তবায়ন করেছেন। রাইসির মৃত্যু সৌদি আরবকে ইসরায়েলের আরও কাছে নেওয়ার পথও খুলে দিতে পারে।

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ